বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন

ঘুষ-দুর্নীতিতে বাড়ছে ব্যবসার ব্যয়….

ঘুষ-দুর্নীতিতে বাড়ছে ব্যবসার ব্যয়….

স্বদেশ ডেস্ক: দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও সুশাসনের ঘাটতিজনিত কারণে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আরও পেছাল বাংলাদেশ। আগের বছরের তুলনায় গত বছর একধাপ অবনমন হলেও এবার আরও দু’ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪৪ দেশের মধ্যে ১০৫ নম্বরে। আগের বছর ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১০৩তম। বিভিন্ন সূচকে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৫২ দশমিক ১। জেনেভাভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এই সূচক তৈরি করেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদন অনুসারে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বাংলাদেশে অবস্থান আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা, কেনিয়া, মঙ্গোলিয়া, হন্ডুরাস, গুয়েতেমালার চেয়েও খারাপ। সিপিডি বলছে, চতুর্মুখী চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এজন্য বিভিন্ন খাতে সংস্কারসহ উন্নতি করতে হবে। না হলে বাংলাদেশ এখন যে উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নত দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। সারা বিশ্বে একযোগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ডব্লিউইএফ। রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সূচকে এক নম্বরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে এবার জায়গা করে নিয়েছে দুই নম্বরে থাকা সিঙ্গাপুর। তালিকায় দুইয়ে নেমে গেছে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে যথাক্রমে হংকং ও নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশের দুই ধাপ পতন: এ বছর মোট ১২টি মূল্যায়ন পিলারের মাধ্যমে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে ১২টি মৌলিক সূচকের মধ্যে ৯টিতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এগুলো হলোÑঅবকাঠামো, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, ব্যবসায় গতিশীলতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি। তবে পণ্য বাজার ও স্বাস্থ্য খাতে এগিয়েছে বাংলাদেশ। বাজারের আয়তনের দিক থেকে অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। বৈশ্বিক বিচারে বাংলাদেশের দুই ধাপ পেছানোর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৩তম। দুর্নীতি সূচকে ১২৫তম। জনসংখ্যার তুলনায় অনিরাপদ পানি গ্রহণে ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, ভূমি ব্যবস্থাপনার গুণগত মান, আর্থিক খাতের অবস্থানেও অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যার বোনাসকাল ভোগ করছে। যেখানে প্রায় ৬৯ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। এরা সবাই কর্মক্ষম। কিন্তু এই অদক্ষ জনশক্তি একদিন বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে। তার মতে, আমাদের দেশে ব্যবসায় গতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের মারাত্মক বাধা রয়েছে। এই কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে আশানুরূপ ফল করতে পারছে না বরং পিছিয়ে পড়ছে। সিপিডি মনে করে, বাংলাদেশ যেখানে হাঁটছে; বিশ্বের অপরাপর দেশ সেখানে দৌড়াচ্ছে।
ঘুষ-দুর্নীতির নমুনা: বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুশাসনে মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, যেকোনো কাজ পেতে এখানে ঘুষ লেনদেন হয়। ৭৮ শতাংশ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, সরকারি কাজ পেতে তাদেরকে ঘুষ দিতে হয়েছে। ৭৬ শতাংশ অভিযোগ করেছেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদেরকে ঘুষ দিতে হয়েছে। কর পরিশোধ করতে ঘুষ দিয়েছেন বলে ৭৪ শতাংশ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত না হওয়ায় সূচকে বাংলাদেশের অবনতি হচ্ছে বলে জানান খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবকাঠামো ভালো হচ্ছে। তবে তা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে ভালো নয়। তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কর্মসংস্থানের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উদ্ভব হয়েছে। অন্যদিকে দিন দিন কিছু ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থান, সামাজিক অস্থিরতা, দেশ থেকে টাকা পাচার এসব বেড়েই চলেছে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ চতুর্মুখী সমস্যায় আটকা পড়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নত দেশে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে।
সিপিডি মনে করে, সরকারি সংস্থার মধ্যে ব্যাপক সংস্কার আনা জরুরি। যদিও এরই মধ্যে কিছু সংস্কার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা অপ্রতুল। প্রযুক্তি খাতকে আরও নজর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল র্কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন র্কর্তৃপক্ষসহ (বিডা) নতুন নতুন যেসব সংস্থা তৈরি হয়েছে, সেগুলো যাতে দ্রুত সেবা দিতে পারে এবং তা যেন সঠিক সময়ে ব্যবসায়ীদের দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে কোনো ধরনের দুর্নীতি ছাড়াই। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সংস্থাগুলো যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার উন্নতি ঘটবে না। তাছাড়া ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসা পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে প্রতিযোগিতা থাকছে না। সবাইকে সমানভাবে সুযোগ করে দিতে হবে।
এশিয়ার অবস্থান: এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ৩ ধাপ এগিয়ে তাইওয়ান। এ বছর ১২ নম্বরে চলে এসেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার অবস্থান ২৭তম। এরপর চীন ২৮, থাইল্যান্ড ৪০, ইন্দোনেশিয়া ৫০, ফিলিপাইন ৬৪, ১০ ধাপ বেড়ে ভারতের অবস্থান ৬৮, ভিয়েতনাম ৬৭, শ্রীলঙ্কা ৮৪, পাকিস্তান ৩ ধাপ বেড়ে ১১০, নেপাল ১০৮ এবং কম্বোডিয়া ১০৬তম অবস্থানে রয়েছে।
শীর্ষ ১০ দেশ: এবারের রিপোর্টে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে সিঙ্গাপুর। পরের অবস্থানে থাকা দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, জাপান, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও ডেনমার্ক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877